আজ শনিবার ১৭-০৫-২০২৫খ্রী. রোজ শনিবার খুলনা এবং বরিশাল জেলার জনসভা যেন জন সমুদ্রে পরিনত হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেন যে, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।
তাই কেউ কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবে আপনার সরকার, এখন মানুষ বলছে এনসিপি মার্কা সরকার’ আপনার সরকারে এনসিপির দুইজন প্রতিনিধি বিদ্যমান।
তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপির সংগঠন করেন অফিসিয়াললি করে না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানেন ওপেন-সিক্রেট! যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান- তাহলে সেই এনসিপি মার্কা দুইজন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলুন যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় নেন।
শনিবার বিকালে খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দানে খুলনা ও রবিশাল বিভাগীয় ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করেছে খুলনা, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্র-যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিনিধিরা সমাবেশে যোগদান করেছেন।
সাবেক বি এন পির মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনার সরকারে একজন বিদেশী নাগরিককে আপনি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন আপনার কী সেই আক্কেল-জ্ঞান নেই? একজন বিদেশী নাগরিক কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন কিভাবে ভাবলেন আপনি?
তিনি রোহিঙ্গ করিডোরের নামে-মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সাথে আপনি কথা বলেননি, এদেশের রাজনৈতিক দলসমুহের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘এ্যারুগেটলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছে, ‘তাতে নাকি কিছু যায় আসে না’ তাই আমি এই জনসভা থেকে দাবি করছি, সেই জাতীয় উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন।
সে যদি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবেন, না হয় আপনি তাঁকে বিদায় করবেন এদেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোন জাতীয় দায়িত্ব বিদেশী নাগরিকের কাছে থাকতে পারে না এটা আপনি নাগরিক ষড়যন্ত্র করছেন যাতে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেই জন্য।
আমরা তা হতে দেব না বিএনপির এই নেতা বলেন, এই দেশের বন্দর, করিডোর সবকিছু নাকি ডক্টর মোঃ ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পরে, বিদেশে আপনি কী কণ্ঠে আর্জি করে এসেছেন সেই কি আমরা জানি না ভেবেছেন?
আপনি অবলিলা ক্রমে বাংলাদেশের সমুন্দ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর সব বিদেশীদের হাতে হস্তান্তর করবেন? কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসছেন? আপানার একমাত্র ম্যান্ডেট- বাংলাদেশ একটি সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়।
আমরা বলেছিলাম, যথেষ্ঠ হয়েছে নির্বাচনমুখী যেই সমস্ত জরুরী সংস্কার করা দরকার, সেই সমস্ত জরুরী সংস্কার আমরা যা পরামর্শ দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের ভিতরে এই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে বলে জানিয়েছিলাম কিন্তু আপনি সেই পরিবেশকে আশস্ত করে রেখেছেন।
আবার আপনি সরে গেলেন আপনি কি মনে করছেন, আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাসীন বানিয়েছে? বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমুহের কোন পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই? যদি তাই মনে করে থাকেন তাহলে আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় আছে বলে মনে করি।
ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতাকে ক্ষুন্ন করে উচ্চাভিলাস প্রকাশ করছেন, তাদের উদ্দেশ্য অনিদিষ্টকাল পর্যন্ত যেন অনির্বাচিত এই সরকার থাকতে পারে। আপনার কি উদ্দেশ্য অবশ্য আমরা জানিনা।
যদি কোনদিন নির্বাচনের দাবিতে এই্ অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য দুভার্গ্য এবং আপনি কী চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সাথে আমাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এদেশের জনগণ সংশয় প্রকাশ করুক।
এদেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক। হুঁশিয়ার করে দিতে চাই- প্রফেসর ডক্টর ইউনূস সাহেব! আপনি বিশ্ববরেণ্য। বিচার ও সংস্কারের বাহনা দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না যাদের কথায় ও পরামর্শে আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন সেই ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে আপনার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণ করুন।
আমারা আগেই বলেছিলাম, আপনার উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর আছে আমরা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম, এখন কিছু বিদেশীদের দোসর আছে আমরা এখন তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছিলাম।
আর যারা এনজিও মার্কা উপদেষ্টা আছে, যারা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছে- ‘বাংলাদেশের জনগণের কথা শোনার প্রয়োজন নেই, তাদের আপনি অপসারণ করুন না হলে আপনাকে স্বসম্মানের সাথে বিদায় নিতে পারবেন কিনা সেটা আমি অঅত্যন্ত সংশয়ের মনে হয়।
জাতীয়তাবাদাদী দলের (বি এন পি)র সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন যে বাংলাদেশের খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জাতিসংঘ স্বীকৃত খুনী শেখ হাসিনার মাধ্যমে গণততন্ত্রকে হরনের জন্য ১৪শ’ মানুষকে হত্যা করেছে এতো গণহত্যার পরও আওয়ামী লীগ এখনো কেন ক্ষমা চায়নি, দু:খপ্রকাশ করেনি।
অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মন্ত্রী এম পি গন সহ শেখ হাসিনা বরং দিল্লিতে বসে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের দায়ী করে আসছেন।
আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্র ধ্বংসের ইতিহাস। বাকশাল গঠনের মধ্যে দিয়ে তাদের প্রথম রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে এবং তারা গত ১৭ বছরে হাজার হাজার মানুষকে বিচারবর্হিভূতভাবে হত্যা, গুম, অপহরণ ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে সীমাহীন নির্যাতন করছে। আর এভাবেই তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে।
আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আমরা সারা বিশ্বে ফ্যাসিষ্টবাদী আওয়ামী লীগ দলের মতো তাদের বিচার চেয়েছিলাম। আইন সংস্কারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিজেদের কর্মকাণ্ডে নিজের মৃত্যু ডেকে এসেছে।সালাউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ শাসনামলে মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে মেগা লুটপাট, অর্থপাচার, ব্যাংক ধ্বংস, বৈদেশিক ঋণের পাহাড় রেখে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রকাশ কমিটি ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ, প্রতিবছর ৭ লাখ কোটি পাচার, মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ৮০হাজার কোটি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে বেলা সাড়ে ৪টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
মন্তব্য করুন