শ্রীমঙ্গলে বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৪ তরুণের মর্মান্তিক মৃত্যু: একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নিল চার প্রাণ
ছাদিকুর রহমান (সাব্বির)
সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। শুধুমাত্র একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে গিয়ে মুহূর্তেই প্রাণ হারালেন চার তরতাজা যুবক। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেশে এই প্রথম বললেই চলে। ঘটনাটি এলাকায় গভীর শোক ও স্তব্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে উপজেলার হরিণছড়া চা-বাগানের শ্রমিক লাইনে এই ঘটনা ঘটে। নিহত চারজনই ছিলেন চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান। অকালেই জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া এই চার যুবক হলেন—রানা নায়েক (১৭), শ্রাবন নায়েক (১৯), কৃষ্ণ রবিদাস (২০) ও নিপেন ফুলমালি (২৭)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে রানা নায়েক তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের গর্তে ফেলে দেন। ফোনটি তুলতে সে প্রথমে নিজেই নিচে নামে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে আর সাড়া দিচ্ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, নিচে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসের কারণে রানা সঙ্গে সঙ্গেই অচেতন হয়ে পড়ে। পরে তার বন্ধু শ্রাবন নায়েক তাকে উদ্ধারে নিচে নামেন। সেও আর ওঠেনি।
এরপর একে একে কৃষ্ণ রবিদাস ও নিপেন ফুলমালি নামেন বন্ধুদের উদ্ধারে। কিন্তু তারাও গর্ত থেকে আর ফিরে আসেননি। স্থানীয় লোকজন অনেক চেষ্টা করেও কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।
দুর্ভাগ্যজনক এই মৃত্যুর ঘটনায় পুরো হরিণছড়া চা-বাগান জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসীর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। চা-শ্রমিক পল্লীর চারটি পরিবারে বইছে শোকের মাতম। অনেকে বলছেন, শুধুমাত্র একটি মোবাইল ফোনের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগে কখনো দেখেননি তারা।
স্থানীয় এক প্রবীণ চা-শ্রমিক জানান, “একটা ফোন তুলতে গিয়ে একে একে চারটা ছেলে মারা যাবে—এটা ভাবতেই পারছি না। আমাদের এলাকার ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কোনোদিন ঘটেনি।”
এদিকে, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পরিত্যক্ত ওই সেপটিক ট্যাংক বা টয়লেটের গর্তে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই একে একে চারজনের মৃত্যু ঘটে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
এই দুর্ঘটনা শুধু শোকই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও রেখে গেল বড় ধরনের সতর্কবার্তা—অপরিকল্পিতভাবে কোনো দুর্ঘটনাস্থলে নেমে পড়া কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই
নিহতরা সবাই চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান।
একটি মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে গর্তে নামেন তারা। গর্তে বিষাক্ত গ্যাস থাকার কারণে মুহূর্তেই অচেতন হয়ে পড়েন সবাই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত ও সহায়তার আশ্বাস।
মন্তব্য করুন