মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ার দেনা থেকে হৃদয় হত্যা: বন্ধুদের বিরোধে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের
ছাদিকুর রহমান (সাব্বির)
সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনলাইন জুয়ার দেনাকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন হৃদয় আহমেদ ইয়াছিন (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্র। নিহত হৃদয় কমলগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং শ্রীমঙ্গল শহরের কালীঘাট রোড এলাকায় ওয়াইফাই অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটন
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। একইসাথে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গামছা, স্কুল ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং একটি মোটরসাইকেল।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রকাশ
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা এবং শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা
১. মো. কাজল মিয়া (২০), পেশায় টমটম চালক, কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ;
২. মো. সিরাজুল ইসলাম (২১), পেশায় বাদাম বিক্রেতা, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
দুজনেই বর্তমানে শ্রীমঙ্গল শহরের শাহীবাগ এলাকায় বসবাস করতেন এবং মাদকাসক্ত।
হত্যার কারণ ও পরিকল্পনা
হৃদয় অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বন্ধু কাজল মিয়ার কাছ থেকে প্রায় ২২ হাজার টাকা ধার নেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত না দেওয়া ও চাকরির প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় বিরোধ চরমে ওঠে। এ থেকেই জন্ম নেয় হত্যার পরিকল্পনা।
গত ৬ জুলাই রাতে কাজল ও সিরাজ কৌশলে হৃদয়কে কাকিয়াছড়া চা বাগানে ডেকে নিয়ে যায়। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে তাদের মধ্যে টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে গামছা দিয়ে হৃদয়ের গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আত্মহত্যা মনে করাতে হৃদয়ের বেল্ট দিয়ে তার মরদেহ গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
আলামত ও অভিযান
হত্যার পর হৃদয়ের মোবাইল ফোন মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজাপুর গ্রামে। পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি, সিসিটিভি বিশ্লেষণ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে।
এসআই অলক বিহারী গুণ ও এসআই মো. মহিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উদ্ধার করা হয় গামছা, স্কুল ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল।
আদালতে সোপর্দ
গ্রেফতারকৃতদের সোমবার মৌলভীবাজার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের বার্তা
পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “ঘটনার পর থেকেই তদন্তে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পেশাদারিত্ব ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত সময়েই হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।”
হৃদয় হত্যাকাণ্ড এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সমাজে অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা ও যুবসমাজের অধঃপতনের আরেকটি নির্মম উদাহরণ হয়ে থাকবে এই ঘটনা।
মন্তব্য করুন