জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র হলের ছাদ ধস: আহত ১১ শ্রমিক, গঠিত তদন্ত কমিটি
রুদ্র বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্র হল ভবনের ছাদ ধসে আহত হয়েছেন ১১ জন শ্রমিক। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে দ্বিতীয় তলার বেলকনির ঢালাই চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভবনটির নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে সিএসআই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে দ্বিতীয় তলার ছাদের ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। বিকেল ৪টার দিকে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে ঢালাই চলাকালে কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং পরক্ষণেই ধসে পড়ে পুরো অংশ। এতে ঢালাইয়ে নিযুক্ত শ্রমিকরা নিচে পড়ে গিয়ে কোমর, হাঁটু ও পিঠে আঘাত পান। পরে আহতদের উদ্ধার করে ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ১১ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে চিকন ও নিম্নমানের রড। খুঁটির ক্ষেত্রে লোহার পাইপের পরিবর্তে কিছু জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে বাঁশ ও পাটের রশি। এছাড়া বৃষ্টির মধ্যেই ঢালাইয়ের কাজ চলছিল, যার ফলে কাঠামো ভিজে দুর্বল হয়ে পড়ে।
নির্মাণকাজে নিযুক্ত এক শ্রমিক জানান, “ঢালাইয়ের কাজ দুপুরে শুরু হয়। দুপুরের খাবারের পর আবার শুরু হলে বিকেলে হঠাৎ করে ছাদ ধসে পড়ে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, “নির্মাণকাজে খুবই চিকন রড ব্যবহার করা হয়েছে, বেশিরভাগই জোড়া লাগানো ছিল। খুঁটির ক্ষেত্রেও লোহার পাইপ না দিয়ে বাঁশ ও রশি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে হলে উঠে আমরা কতটা নিরাপদ থাকব, সেটিই এখন প্রশ্ন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “ঘটনা শুনেই আমি ঘটনাস্থলে যাই। আহতদের একজন কোমরে বেশি ব্যথা পেয়েছেন। দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নির্মাণাধীন ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহাত হোসেন দিদার বলেন, “ছাদ ঢালাইয়ের আগে আমরা সবকিছুই চেক করেছিলাম। কিন্তু মাঝখানে বৃষ্টি হওয়ায় খুঁটি দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।”
শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সবসময় নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলার নির্দেশ দিয়ে থাকি।”
প্রকৌশল দপ্তরের কোনো গাফিলতি ছিল কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি আমাদের কোনো গাফিলতির ফল নয়, বরং একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “ছাদ ধসের ঘটনায় ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর জন্য চিঠি দেওয়া হবে।”
মন্তব্য করুন