৩৩ বছর পর ধ্বংসের দিনেই নির্মিত হচ্ছে বাবরি মসজিদ
- আপডেট সময় : ০৯:২২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে

৩৩ বছর পর ধ্বংসের দিনেই নির্মিত হচ্ছে বাবরি মসজিদ
মাসুম ইবনে মুসা, খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি, দুর্নীতি তালাশ নিউজ টিভি।
ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অর্থ্যাৎ ৩৩ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগরে একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন তৃণমূল এর বহিস্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ গড়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় ডিভিশন বেঞ্চ কোনো হস্তক্ষেপ না করায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে এখন আর কোনো আইনি বাঁধা নেই। শনিবার ৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং দুপুর ১২টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শত শত আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ফিতা কেটে ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হুমায়ুন কবির। এ আয়োজনকে ঘিরে অতিথিদের জন্য প্রায় ৪০ হাজার প্যাকেট এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরও ২০ হাজার প্যাকেট বিরিয়ানি তৈরি করা হয়। নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর স্লোগানের মধ্যে দিয়ে মুসল্লিরা মাথায় ইট নিয়ে আসার দৃশ্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা এই উদ্যোগের প্রতি সাধারণ মানুষের গভীর সমর্থন ফুটে ওঠে।
অযোধ্যার বাবরি মসজিদের অনুকরণে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে মসজিদের পাশাপাশি এখানে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে, যা মোট ২৫ বিঘা জমিতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এই অনুষ্ঠান শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে এটির অর্থায়নে রাজ্য সরকার নয় বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত হবে। হুমায়ুন কবীর বলেছেন, এই মসজিদ তৈরি করতে প্রায় ৩ বছর সময় লাগবে এবং প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনই দিয়েছেন ৮০ কোটি টাকা। এছাড়াও প্রতিদিন দানবাক্স থেকে আসছে লাখ লাখ টাকা।
হুমায়ুন কবীর বর্তমানে মুর্শিদাবাদের ভরতপুর আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। হুমায়ুনের এই ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। এখানকার অনেকেই চাইছেন না বাবরি মসজিদ গড়ার নামে এই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হোক। তিনি আরো বলেছেন, এই উদ্যোগ মুসলমানদের মর্যাদার লড়াই এবং তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিধানসভায় লড়াই করবেন। তৃণমূল কংগ্রেস হুমায়ুন কবীরকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর জবাবে হুমায়ুন কবীর আগামী ২২ ডিসেম্বর নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ভারতে মুঘল সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট জহির উদ্দিন মুহাম্মাদ বাবর তার সম্রাজ্যের গোড়াপত্তনের মাত্র ৩ বছরের মাথায় ১৫২৯ সালে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যাতে একটি মসজিদ নির্মাণের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। সেই মসজিদের নাম দেয়া হয় বাবরের নামে, “বাবরি মসজিদ”। তারপর পেরিয়ে যায় প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর। এরই মধ্যে ভারত বর্ষে উত্থান হয় উগ্র হিন্দুত্ববাদের। কালের পরিক্রমায় ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এর সহযোগী সংগঠনের হিন্দু কর্মীরা উত্তর প্রদেশের সেই ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয়।


























